অন্য শীতের সকাল
শীতের সকালের কুয়াশা কাটেনি এখনও।
সাড়ে পাঁচ মাস আগে, হাতের শিকল ভেঙে গেছে,
কিন্তু সেই হাত এখনও মুষ্ঠিবদ্ধ রয়েছে—
যদি কোনো নতুন শত্রু আসে আবার!
এত সকালেও চায়ের দোকানটা খুলে গেছে যথারীতি।
রোজ আসি এখানে, গল্পগুজব হয়— রাজনীতি, সংস্কৃতি থেকে
ধর্ম, শিক্ষা, গণতন্ত্র, মধুসূদন থেকে বিবেকানন্দ… সব!
হাসি আমোদ, খবরের কাগজ,
এই নিয়েই কেটে যায় সকালের প্রথম ভাগ।
বাড়িতে রেডিও নেই, তাই এখানে এসেই শুনি বাসী খবর!
এক-ভাঁড় চা দিতে বলে, আবার গিয়ে বসলাম বেঞ্চে;
মাটির ভাঁড় ছাড়া চা ভালো লাগেনা একদম,
মাটির একটা আলাদা সুগন্ধ আছে না?
ফেরার পথে কুমারটুলিতে যাব একবার,
বাগদেবীর পুজোয় আর পনেরো দিন বাকি।
মাটি দিয়ে কী অপরূপ মূর্তি গড়েন ওঁরা
মৃন্ময়ী প্রতিমা যেন চিন্ময়ী হয়ে ওঠেন তাঁদের নৈপুণ্যে!
যদিও তিন টুকরো হয়ে গেছে এই মাটি,
প্রতিদিন কত লোক ছুটছে উদভ্রান্তের মতো
একদিক থেকে আর এক দিকে— একটু মাটির জন্যে!
শান্তিতে থাকবে বলে টুকরো টুকরো করেই ছাড়লো ওরা,
বুড়োটার কোনো কথা শোনার প্রয়োজন মনে করলো না কেউ!
অশান্তি বাড়বে এতে, বলেছিল বুড়ো…
এর পরে আরো কী কী হবে, কী জানি!
চা চলে এসেছে এইসব ভাবতে ভাবতে।
মুখে একরাশ ভয়ের ছাপ নিয়ে
দোকানি আজকের খবরের কাগজটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল:
দাদা! শয়তানগুলো এখনও এই মাটি থেকে গেল না!
হাত থেকে পড়ে গেল চায়ের ভাঁড়টা!
ভাঁড়ের মাটিতে রক্তের ছিটে:
একটা পশু কাল খুন করে দিয়েছে বুড়োটাকে!!
©সৈকত দাস
৩১ শে জানুয়ারী, ২০২০
১৬ ই মাঘ, ১৪২৬