লক্ষ্মী মেয়ে
~ শ্রী সৈকত
মেয়ে, তুই লক্ষ্মী হ।
মেয়ে, তুই ফসলের ক্ষেতে ক্ষেতে ছুটে বেড়া,
হাতে হাত মিলিয়ে সোনার ফসল ফলা বন্ধ্যা মাটির বুকে—
মেয়ে, তুই লক্ষ্মী হ।
তুই অবাধ্য, তুই বন্ধনহীন, তুই চঞ্চল, উচ্ছৃঙ্খল,
এতদিন ধরে বয়ে নিয়ে আসা ‘কর্তার ভূতেদেরকে’
এক ঝটকায় ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে,
এই পচাগলা সমাজটাকে নিয়ে ছুটে চল
পাতালের দানবের দেশ থেকে আনন্দধামের দিকে…
মেয়ে, তুই লক্ষ্মী হ।
বড়ো বড়ো মানুষের ষড়যন্ত্রে, আত্মহত্যা করেছে যে কৃষক বাবা,
তাঁর পরিবারের ভার তুলে নে তোর শক্ত দুই কাঁধে:
মুছিয়ে দে তাদের চোখের জল,
জাতের জন্য মার খাচ্ছে যারা প্রতিদিন।
অপরিচিতের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে
দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন হয়ে যাক তোর…
মেয়ে, তুই লক্ষ্মী হ।
তোর হাত ধরে থামুক লুকিয়ে লুকিয়ে গর্ভ থেকে
লক্ষ্মীদেরকে নিঃশব্দে সরিয়ে ফেলার চক্রান্তগুলো।
তোর হাত ধরে উড়ুক বিশ্ব, বিজ্ঞানের নতুন গতিপথে—
অন্ধবিশ্বাস আর ধর্মের নামে গোঁড়ামিকে ছিন্নভিন্ন করে দিক
তোর ওই বরাভয়-প্রদায়ী দুটো হাত।
মেয়ে, তুই লক্ষ্মী হ।
তোর হাতের কঠিন পুলিশি প্রহারে গড়িয়ে পড়ুক ধর্ষকের রক্ত,
আর সেই রক্ত, টকটকে লাল গোলাপ হয়ে ফুটে থাকুক
প্রতিটা ধর্ষিতা বোনের বাড়ির আঙিনায়,
যে আঙিনায় অনেক লক্ষ্মীরা আজ ক্যারাটের প্যাঁচে
ধরাশায়ী করছে তাদের লজ্জা আর ভয়কে।
মেয়ে, তুই লক্ষ্মী হ।
রাজনীতির কুরুক্ষেত্রে অসংখ্য লক্ষ্মীকে নিয়ে
উঠে দাঁড়িয়ে বল— সমাজটা পুরুষশাসিত নেই আর,
তুই বল: মাতৃশক্তি চালাবে সারা বিশ্বকে…
ওরে মেয়ে, তুই লক্ষ্মী হ—
তোর পেঁচা কিন্তু সব শুনছে তার উন্নত কান দিয়ে,
রাতের অন্ধকারে ঘটে চলা সবকিছু দেখছে
তার বড়োবড়ো চোখদুটো দিয়ে:
মেয়ে, তুই পারবি না, আমাকে একটা নতুন সকাল উপহার দিতে?
© শ্রী সৈকত
১৪ কার্ত্তিক, ১৪২৭
৩১ অক্টোবর, ২০২০