Tuesday 11 December 2018

পুরুষোত্তমের প্রতি

পুরুষোত্তমের প্রতি

                                         ~ সৈকত দাস



হে চির সুধীর, কৌশলী বীর, তব বাণী ছায়াতলে,
অবনত জাতি আজিকে গো দেখি উন্নত শিরে চলে!
হে রাজাধিরাজ, সন্ন্যাসী গৃহী, শঙ্খচক্রধারী—
হে গোঠরাখাল, ব্রজের গোপাল, কুঞ্জকাননচারী,
তব কণ্ঠের সে অমোঘ স্বর
ধ্বনিত হইছে ভেদি অম্বর
আজি এ নিশীথে মিলি মোরা সবে তোমার পূজার তরে
হে মহাবতার শঙ্খ বাজিছে আজিকে যে ঘরে ঘরে!


প্রথম সে রাতে কংসের হাতে বন্দী সে মাতাপিতা
জন্ম দিলেন পুরুষোত্তমে, জানিত জগৎ কি তা?
জানিত না বুঝি, তাই তো তোমারে উঠাইতে হল গিরি,
দশম বর্ষে ত্যাজিলে সবারে, কংসদর্পহারী!
মহাভারতের সেই মহারণে
ত্যাগের শিক্ষা দিলে অর্জুনে,
ন্যায় অন্যায় বিচারিতে তুমি দানিলে তোমার গীতা,
জগৎ জানিল সবই তব মায়া, তুমি আদি মাতাপিতা!


তুমি তো অনাদি, তুমি অনন্ত, তোমারে পুজিব কেমনে?
তাই তো মননে গড়িয়া মুরতি পুজিতে চাই গো যতনে!
তুমি বল নাই একটি পথেই হবে তব দিকে যেতে—
পথ যাই হোক, যোগী সে তো থাকে তোমাকেই নিয়ে মেতে।
কেউ বা বন্ধু ভাবে গো তোমায়
মা হয়ে কেহ বা তোমারে খাওয়ায়
কেউ বা তোমারে ভেবে প্রভুসম চাইছে চরণে স্থান।
সন্তান তব উন্মাদ হয়ে 'মা' বলিয়া ধরে গান!


সন্তানহীনা, ডাকে সেই মা, "আয়রে গোপাল আয়
কখন খাবি বল তো রে তুই, ওই বেলা বয়ে যায়!"
বন্ধু তোমাকে মুখে তুলে দেবে তার খাবারের ভাগ;
সন্ন্যাসী যে গো ত্যাজিবে সবারে, তোমা প্রতি অনুরাগ—
সে সদা বলিবে "সকলের সার
তুমি আর আমি একে একাকার,
কে প্রভু, কে দাস, বুঝি না তো আমি, কোনো ভেদ নাই আর!
সব স্থান আজ তুমি-ময় দেখি, মুছে গেছে সংসার!"


ভক্ত তোমার নেচে কেঁদে গেয়ে ডাকিছে তোমারে সদা,
দেখবেই তারা তাঁরে, যাঁর হাতে শঙ্খ চক্র গদা!
কেউ হাতে নিয়ে ত্রিশূল গরজে ব্যোম্ শঙ্কর ব্যোম্
তোমার প্রতীকে ঢালিতেছে জল, তুমিই অনাদি ॐ!
তোমারে ভজিছে কত শত নামে,
কেউ বলে শ্যাম, কেউ মাতে রামে,
"তব রহমতে ভালো আছি" বলে মোসলেম ভাইগণ
তোমার ক্রুশেতে নোয়াচ্ছে মাথা খৃষ্টান যেই জন।


শিখ খালসা উঠাইয়া শির বলে গুরুজীর জয়
তুমি আছো যবে তাদের সঙ্গে, নাহি কোনো পরাজয়।
তোমার মুরলী সদাই বাজিছে ভক্ত হৃদয় মাঝে,
নাস্তিক, সেও বিচার করিয়া খুঁজে ফেরে তোমারে যে!
সে তোমার লীলা বুঝিবারে নারে
তাই তো তোমায় খুঁজে খুঁজে মরে,
তুমি যে প্রকাশো জগৎ মাঝারে নানা রূপে নানা সাজে —
তুমিই যে তার, তুমিই বীণা, তব হাতে বীণা বাজে!


শিল্পী তোমারে ফুটিয়ে তুলিছে তাহার শিল্প মাঝে—
কেহ তুলে নিয়ে হাতে রং-তুলি, কেউ বা গানের ভাঁজে।
জগতে যা কিছু চির সুন্দর, যাহা কিছু সুধামাখা
তোমার গণিতে, তোমারই তুলিতে, তোমার মনেতে আঁকা!
হে পাপনাশন, আজিকে এবার
সুন্দরে তুমি আঁকো আরবার
পাপের ধরায় উঠুক আবার নতুন দিনের রবি
হিংসায় ভরা কৌরবমাঝে স্মরি তব নাম, কবি!



Sunday 2 December 2018

সংসার পাঁকের মাঝে, এ হৃদয় বিক্রি আছে

সংসার পাঁকের মাঝে, এ হৃদয় বিক্রি আছে

                                             ~ সৈকত দাস




আমরা সবাই বিকোই, দুনিয়ার হাট বাজারে,

কখনো চুপে চাপে, কখনো লোক মাঝারে!

আমাদের চোখও বিকোয়, প্রেম আর রূপের মাঝে—

কখনো মায়ের মুখে, কখনো প্রিয়ার সাজে।

আমরা বিক্রি করি আমাদের ইন্দ্রিয় সব

কান তো উচ্চকিত শুনতে চটুল গুজব;

কর্মীরা বিকোচ্ছে হাত ফি-দিনের কিনতে রুটি

জগতের এই বাজারে কেউ তো চায় না ছুটি!

ছুটি চায়, আঁচড় খেলে, মাইনে ঠিক না পেলে,

সং-সার বুঝল না যে, দিন তার গেলই চলে।

দেখি আজ বিকোচ্ছে মন স্বার্থের প্রেমের কাছে

স্বার্থ ফুরিয়ে গেলেই ভোলা মন ঝুলছে গাছে!

ওরে প্রেম সত্যি আছে, একেবারে স্বার্থ ছাড়া

সে পিরিত বিলিয়ে গেলেন নদীয়ার প্রেমিক গোরা!

সে প্রেমেও বিকোয় হৃদয়, জগতের সবা তরে

কেনা আর বিক্রি ছাড়া কিবা আছে এ সংসারে?

যে জিনিস বেচলে পরে এ হাটের ক্ষান্তি হবে

সে হৃদয় বিক্রি করে কে তাঁরে কিনছে কবে?

তুলসী যে আকর্ষণে পৌঁছোল স্ত্রী এর ঘরে—

সেই এক প্রেমের টানে প্রভু রামে আপন করে!

দশ দিকে উঠছে আজি বিবেকের প্রেমের বাণী

ধন, জন বিকিয়ে দিয়ে একবার আয় দেখিনি!

এসে দেখ মানবপ্রেমে হাসছেন পাগল ঠাকুর

শিবরূপ জীবের সেবায় দে আজ জীবনটা তোর।

ভালোবাস আজ পাপীরে, চোরকে ধর না বুকে,

ঈশামসি ডাকছেন ওই দাঁড়িয়ে সজল চোখে!

আজ তবে যাক বিকিয়ে দুনিয়ার হৃদয় যত

বুদ্ধের পায়ের কাছে মাথা আজ হোক না নত—

পুরুষোত্তমের পায়ে হোক আজ শরণাগত—

প্রেম হোক বাঁধনছাড়া ঘুচে যাক ময়লা যত!

©Saikat Das


সর্বাধিক পছন্দের লেখা

পুরুষোত্তমের প্রতি

পুরুষোত্তমের প্রতি                                          ~ সৈকত দাস হে চির সুধীর, কৌশলী বীর, তব বাণী ছায়াতলে, অব...