Saturday 22 June 2019

দিনান্তে

দিনান্তে

                             ~ সৈকত দাস



অতঃপর সন্ধ্যা নেমে আসে
রক্ত-গোলক চলে অস্ত-পথে —
অকারণ তীব্র দাবদাহ
জুড়িয়ে আজি যাবে আঁধার রাতে!
পশ্চিমেতে গঙ্গাতীরে দেখি
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে ।।

দূরে শুনি কোন সে বীণা বাজে
পূরবীতে স্নিগ্ধ গভীর সুরে
সেই সুরেতে পা বাড়িয়ে দিলেম
যাবো বুঝি কোন সে স্বপন-পুরে—
অস্ত-রবির বিদায়বেলায় আজি
শুনতে পেলেম কবির বীণা বাজে ।।

পাখির দল ফিরছে তখন নীড়ে
পূর্ণ আকাশ তাদের কাকলীতে;
দিনের শেষে ক্লান্ত কিছু ফুল
পড়ছে ঝরে গ্রীষ্মের’ নদীতে
সন্ধ্যাকাশে, হরেক রকম পাখি
ডানা মেলে ফিরছে তখন নীড়ে ।।

দখিন থেকে হঠাৎ হাওয়া এলো
সঙ্গে করে একরাশি মেঘ নিয়ে
ঠিক যেন তার কালো চুলের মতো
আসছে বারিদ, বিদ্যুৎ কাঁপিয়ে—
অতীত থেকে কোত্থেকে আজ কেন
দমকা হাওয়ায় গুচ্ছ স্মৃতি এলো!

সন্ধ্যাতারা যাচ্ছে না তো দেখা
ঢেকে আছে কৃষ্ণ ঘনঘোরে
যেন তারে নিচ্ছে কেড়ে কেন
আমার থেকে নিঠুর সময়-চোরে
নদীর পাড়ে হাঁটতেছিলেম একা
সন্ধ্যাতারা যাচ্ছিল না দেখা!

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে আসে
অন্ধকারে একলা আমি ভিজি
তবু এগোই, যেথায় বীণা বাজে
হয় তো তারে আজই পাবো খুঁজি
আজকে হৃদয় অমৃতধারাতে
ভিজিয়ে দিতে, বৃষ্টি নেমে আসে—
সেই জলেতেই মরুভূমির মতো
তোমার-আমার ছোট্ট শহর ভাসে…

তুমি আর আমি

তুমি আর আমি

                              ~ সৈকত দাস




কালচক্র ঘুরে চলে আপন ছন্দে
আমার ইঙ্গিতে
সময়? সেও যায় থেমে, হঠাৎ কখন
মোর অঙ্গুলিহেলনে
আমি রাজ রাজেশ্বর।
তবু আমি, সৃষ্টির আদি থেকে—
লয়ের পর থেকে—
কল্পের পর কল্প ধরে—
নিশ্চল, নির্বিকার, নির্বাক, স্তব্ধ হয়ে
বসে থাকি তোমার প্রতীক্ষায়!
তবুও খুঁজি না তোমায়!
এ কী আশ্চর্য নয়!

অতঃপর তুমি এসে বসো পাশে
না না, পাশে নয়, আমারই ভেতরে তুমি রও
জেগে ওঠে প্রণবধ্বনি
কেঁপে ওঠে অধর মোর
তোমার পরশে!
আমি বলি, “আমি ভালোবাসি”
তুমি মোরে শোনাও সঙ্গীত…
আমি তো জড় মাত্র, তোমার পরশ ভিন্ন
হে উমে, হে শক্তি মোর!

তোমার লীলায়, আমার মাঝে, জাগরিত কর
প্রথম রিপু— জগতের প্রতি তোমার আশির্বাদ!
পরশে পরশে বলো “আমি ভালোবাসি”
রত হও তুমি, মোর সাথে নবসৃষ্টিরসে
তবু সৃষ্টি নাহি হয়!
জীব যেন জন্মে, তবু জন্মায় না তারা
নক্ষত্রে নক্ষত্রে হয় মহাঅভিঘাত
কিন্তু কোনো নক্ষত্র তো জন্মেনি কোনোদিন!

প্রিয়ে, তোমার এ কী খেলা!
আমি চেষ্টাও করিনি বুঝতে কোনোদিন—
তোমাকে জানলেই পাছে হারিয়ে যাও তুমি
তোমাকে চিনলে, যদি দেখি চোখ খুলে—
তুমি আর আমি, কেউ নই যে পৃথক
এক আমি সত্য! না না, সে দৃষ্টি অন্ধ থাক!

বড়ই মধুর এই খেলা, তোমার মায়ার ছায়ায়
যেমন সকল জীবে করে কোলাহল
হাসে, কাঁদে, ভালোবাসে, কাঁপে ত্রাসে,
যেমন চন্দ্র-গ্রহচয়, পাগলের মত ছোটে
নক্ষত্রদল ছোটে যেমন মৃত্যুর উদ্দেশে… জন্মের আকাঙ্খায়,
বৃক্ষরাজি ঢেলে দেয় পুষ্পসকল—
আমার উদ্দেশে… তোমার উদ্দেশে!

জাগাও তুমি উত্তাল তরঙ্গ, নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের বুকে
নীরব বিহঙ্গ সব, পূর্ণ করে খ-মন্ডল
কলকাকলিতে— তোমার নির্দেশে
গড়ো, ভাঙো, পূর্ণ করো এ মোর সৃষ্টিকে
নিমেষে নিঃশেষ করে ফেল এই সবে
তুমি করো নিজ ছন্দে, আমি দেখি চেয়ে
তুমি ছাড়া, পূর্ণব্রহ্ম চির অপূর্ণ যে!

তেমনই তোমার গভীর চুম্বনে
শিহরিত হই আমি,
ভেঙে দিই, নিজ হাতে গড়া যত নিয়মের ব্যাকরণ
মুছে দিই যত আলোর ঝলক
তুমি,আমি— পুনঃ হই একাকার, এই ঘোর তমসায়…

(বহরমপুর, ২৫ শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৬)

সর্বাধিক পছন্দের লেখা

পুরুষোত্তমের প্রতি

পুরুষোত্তমের প্রতি                                          ~ সৈকত দাস হে চির সুধীর, কৌশলী বীর, তব বাণী ছায়াতলে, অব...