Friday 11 September 2020

 


বড্ড দুঃখ

                               ~ শ্রী সৈকত


বাঙালি দুঃখবিলাস ভালোবাসে।

তার ফ্রিজে ঢোকানো লালশাক আছে,

কনভেন্টে পড়া বাচ্চা আছে,

ফাইফরমাস খাটা কাজের লোক আছে একটা,

তবু সে দুঃখবিলাস ভালোবাসে।

বাঙালির দেশপ্রেম আছে, জাতিপ্রেম আছে,

ধর্না আছে, পাড়ার প্রেম আছে,

পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই উত্তর দক্ষিণ ভাগ আছে,

বাঙালি, বাংলা বলতে কলকাতা বোঝে,

আর কলকাতা বলতে বুদ্ধিজীবী,

কাজ না পাওয়া বেকারের প্রেম দেখলে চোখ জ্বালা করে,

পরনিন্দা কে না করে? বাঙালিও করে,

তবে দুঃখ আর সুখের মধ্যে বেছে নিতে বললে—

বাঙালি সুখটা চেটে নিয়ে দুঃখবিলাস ভালোবাসে।

রসগোল্লাটা ভালো ছিল, তবে স্বাদটা থাকলো না বেশিক্ষণ— দুঃখ।

প্রেমটা জমেছিল, কিন্তু ছেলেটা ওর কথা মতন চলছিল না

তাই ব্রেকআপ— দুঃখ।

নিজের বাড়িতে বউ রেখে কলেজের প্রেমিকার সাথে

পরকীয়া করতে পারছে না— দুঃখ!

ইত্যাদি সব বিভৎস করুণ দুঃখ নিয়ে বাঙালি হাঁটছে,

হাঁটছে তো হাঁটছেই, থামবার নামই নেই!

আর কাব্য করে করে ছড়িয়ে দিচ্ছে সেই দুঃখমালা।


আর যেসব বাঙালি সত্যি সত্যিই দুঃখে আছে,

তাদের মাথায় খাবারের চিন্তা,

বাচ্চাকে পড়ানোর চিন্তা,

মায়ের ক্যানসারের চিকিৎসার টাকার চিন্তা,

বর্ষার সময় ফুটো ছাদের নীচে বসে চিন্তা,

কাজ খুঁজে খুঁজে খালি হাতে বাড়ি ফিরে প্রতিরাতে দুশ্চিন্তা—

বিলাসের সময় পাবে কখন বলুন তো!

আপনার অঢেল সময়, 

করুন, দুঃখবিলাস করুন।


© শ্রী সৈকত

২৫ ভাদ্র, ১৪২৭

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

লাশ



লাশ

              ~ শ্রী সৈকত

ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পাথরের মাঝে
কয়েকশ’ বিকৃত লাশ— মানুষের লাশ।
পচে ফুলে ওঠা, কোনোটার চোখ খুবলানো,
কোনোটার পা কাটা, হাত আধখাওয়া।
জঙ্গলের শেয়াল আর আকাশের শকুনেরা
অনেকদিন পর খাচ্ছে পেট ভরে, ফেলে ছড়িয়ে।
তাদের বাপ-ঠাকুরদার কাছে গল্প শুনেছিল তারা,
বহুদিন আগে, দাঙ্গায় মরা মানুষগুলোকে
তৃপ্তি করে খেয়েছিল পূর্বপুরুষেরা।
এরা মানুষ, এরা যুদ্ধ করে মন্দির আর মসজিদের নামে,
এরা দাঙ্গা করে, দাঙ্গার পরের গঙ্গা, তার রক্তগোলা জল নিয়ে
সাগরের কাছে যেতে কুণ্ঠাবোধ করে, তবু যেতে হয়—
পবিত্রতার শিক্ষা দিতে পারেনি সে সন্তানদেরকে।
দাঙ্গার সময়ে কোনো কোনো ‘মানুষ’ বেঁচেও থাকে,
রামকে নিজের বাড়িতে রেখে বাঁচাতে গিয়ে
খুনে তলোয়ারের সামনে প্রাণ দেয় ইকবাল,
ছোটবেলার বন্ধু মকবুলকে বাঁচাতে বুক পেতে দেয় ব্রাহ্মণের ছেলে নিবারণ—
তারা তো মরে না, বেঁচে থাকে সময়ের বুকে,
অমাবস্যার শ্মশানে একফোঁটা জোনাকির মতো!
শেয়াল শকুনেরা অবশ্য জানে না অত কথা,
বোঝে না তারা: খিদে পেলেই লাশ খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে রোজ রোজ,
তবে রোজ তো আর দাঙ্গা হয় না,
তবে ধর্ষিত লাশ, না-খেতে-পেয়ে মরা লাশ পেয়ে যায় কেউ কেউ।
ওদিকে সংবিধানের শব্দগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলতে জ্বলতে
উপহাস করতে থাকে তাদেরকে, কিম্বা হয়তো নিজেদেরই!

© শ্রী সৈকত
২৫ ভাদ্র, ১৪২৭
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
বহরমপুর


সর্বাধিক পছন্দের লেখা

পুরুষোত্তমের প্রতি

পুরুষোত্তমের প্রতি                                          ~ সৈকত দাস হে চির সুধীর, কৌশলী বীর, তব বাণী ছায়াতলে, অব...