রজনীগন্ধা দিও
~ শ্রী সৈকত
যদি কখনো ভালোবেসে, কিছু দিতে চাও আমাকে,
যদি কখনো আমার দেহ-মন-বুদ্ধি ছাড়াও, শুধু আমার ‘আমি’কে,
আমার সবটুকুকে ভালোবাসতে পারো,
তবে দিও না গোলাপ কিম্বা অন্য কোনো রঙিন ফুলের তোড়া—
শুধু একগুচ্ছ রজনীগন্ধা দিও।
যদি কবির কোনো জন্মদিনে, মনে পড়ে যায় তাকে,
যদি কিছু দিতে, সত্যিই খুব মন চায়,
তবে দিও না কোনো ঝলমলে দামী পোশাক, হাতঘড়ি কিম্বা
বাহারী কোনো সৌখিন জিনিস—
নিজের হাতে করে, তার হাতে তুলে দিও
মন ভরিয়ে দেওয়া একগুচ্ছ সাদা ফুল— রজনীগন্ধা।
গোলাপের সুবাস, আমি পাইনি কোনোদিনই;
অন্যদেরকে গোলাপে মাতোয়ারা হয়ে যেতে দেখে,
আমি অবাক হয়ে যাই বারবার;
তাই যদি কখনো ভালোবাসো, যদি রাখো মনের মাঝখানের
কোনো বিশেষ স্থানে; আর যদি সেই প্রেম,
প্রকাশিত হওয়ার জন্য, খোঁজে কোনো মাধ্যম:
রক্ত-লাল গোলাপ, নিতান্তই অসমর্থ, নিষ্ক্রিয় সে দায়িত্ব বহনে—
সব রঙ মিলে যায় যে সাদা রঙে, বেঁধে ফেলো আমাকে
সেই রজনীগন্ধার মোহময়ী সুগন্ধে।
একদিন হঠাৎ, কাউকে কিছু না বলেই, ছুটি নিয়ে নেবে
এই কণ্ঠ, কলম, আর এই শরীর,
থেমে যাবে যত গান, আর উচ্চস্বরে তীক্ষ্ম কবিতা পাঠ,
মুছে যাবো হয়তো বা তোমার স্মৃতি থেকেও…
তবু, চলে যাওয়ার পর, যদি কখনো আনমনে
চোখ আর্দ্র হয়ে আসে তোমার—
কয়েকটা পয়সা, ওই গরীব ফুলওয়ালি মা’কে দিয়ে,
নিয়ে এসো একটা রজনীগন্ধার মালা:
মনে হলে, পরে নিও নিজের গলায়—
যেখানে হয়তো থেকে যাব আমি, চিরকালের জন্য, অব্যক্ত হয়ে!
© শ্রী সৈকত
২৮ শে মাঘ, ১৪২৬
কলকাতা
No comments:
Post a Comment