Saturday 21 December 2019

বর্তমান ভারত

বর্তমান ভারত

                                ~সৈকত দাস


উড়ছে দেখো জেট বিমানে, ওই আমাদের মহান রাজা।
কাটছে দেখো গাঁটের কড়ি, দেশবাসীদের রক্তে ভেজা।
উড়ছে রাজা, ডুবছে প্রজা গলায় বেঁধে অর্থনীতি—
গণিত? সে তো ভাবছে বসে: আইনস্টাইন করলো টা কী!
পাচ্ছে নোবেল দেশের কৃতী, দেখছে সবার সাথেই বিকাশ,
দেশের লোকে করছে বসে বাতাস পচার হিসাব নিকাশ!

মাস্ক লাগিয়ে ঘুরছে মানুষ, বাঁচতে হলে মার্সে যাবে,
মাটন ছেড়ে দুর্গাপুজোয় বঙ্গ তনয় ধোকলা খাবে।
আর কি করা দেশের বেড়া টপকে চলো পড়তে যাব,
আর কিছু না পেলেও বাপু, কম খরচে শিক্ষা পাব!
(আমার) বাপের টাকায় মূর্তি হবে, ঘুরবে রাজা দেশ বিদেশে,
মুক্ত শিক্ষা চাইলে পরে, ফিরতে হবে আঙ্গুল চুষে।
(দেশকে) শিক্ষা-মুক্ত করতে পারি, মুক্ত-শিক্ষা কী জন্য রে?
তার চেয়ে বরং আয় নাচি আয়, ধর্ম দিয়ে মানুষ মেরে!

নতুন করে বলল রাজা, এবার নাকি বিকাশ-সাথে
বিশ্বাসটাও ফ্রীতে দেবে, দেশবাসীদের খাবার পাতে।
কিন্তু সবই গোলমেলে রে, বিশ্বাস তো করছে না কই!
যুক্তি তর্ক করছে, ওদের গাছে তুলে নে কেড়ে মই।
রাজার কথা মানলে পরে, ‘দেশপ্রেমী’ তকমা পাবে,
যুক্তিবাদী সত্ত্বা নিলে এই দুদিনেই অক্কা পাবে!

লিখছি কেন এসব কথা? লিখছি আমি বদখেয়ালে,
জয় দেখছি মিথ্যাবাদীর, ভারত এখন কোন গোয়ালে!
এই কবিতার হয় নাকো শেষ, হয়েছে শুরু আদ্যিকালে;
ভারত যেদিন স্বমহিমায় স্বগরিমায় উঠবে জ্বলে—
সেই দিনটার জন্য বাঁচি, সেই দিনটার জন্য বাঁচাই,
নরেন-সুভাষ আসবে নাকি? সেই দিনটাই দেখতে যে চাই!
(এখানে) সন্তানদের লাশের ওপর লাঞ্ছিতা মা কাফন বিছায়,
আয় না রে ভাই দুহাত দিয়ে, মায়ের চোখের অশ্রু মোছাই!

©সৈকত দাস
২৮ শে অগ্রহায়ণ, ১৪২৬

Saturday 14 December 2019

কেয়ামত

কেয়ামত

                  ~ সৈকত দাস




গুজরাটের বুক ছিন্নভিন্ন করে অসমের দিকে
পশ্চিমে দ্বারকার দেশ থেকে সূর্যোদয়ের দেশের দিকে
এগিয়ে আসছে নরপিশাচের দল:
দাঁত নখ তাদের, শাণিত ছুরির ফলার মতো!
তাকিয়ে দেখো, তারা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে সংবিধানের পাতাগুলো—
মানুষের সংবিধান, যার মাঝে তারা ঢুকিয়ে দিচ্ছে
নিজেদের পচা গলা আত্মার অবাঞ্ছিত অংশ!

ওই দেখো,
নরমেধযজ্ঞের পুরোহিত ঘুরছে মানুষের বাড়ির বাইরে!
দূরে বসে তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে একদল পিশাচ
আর তাদের রোখার নামে,
গ্রামের ঘরগুলোকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে
একদল মানুষ— না না ও তো মুখোশ!
সুচেতনা, ওই মুখোশ খুলে দিতে পারবে না তুমি?
তোমার লেখনীর আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারো না তাদের—
যারা সুস্থ মানুষের হৃৎপিণ্ডগুলোতে এঁকে দিয়েছে গভীর ক্ষত?

এই মাটি একদিন শস্যে ভরে উঠেছিল যাদের ঘামের স্পর্শে,
এই বাতাসে যাদের প্রার্থনার শব্দে রোজ ভোরে ঘুম ভাঙত আমাদের,
আর আমরা দুজনে প্রার্থনা করতাম সকলের মঙ্গল চেয়ে,
তাদেরকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে পশুগুলো—
তুমি ভেবেছিলে কোনোদিন?

রক্তপায়ী শাসককে আমরা কেন ডেকে এনেছিলাম?
কেন পারিনি বন্ধু আর শত্রুতে পার্থক্য করতে?
কেন তাদের বানানো মিথ্যার চশমা পরে
আমরা তাদের ইশারায় নেচে চলেছি এতদিন—
ভাবতে পারছ?
ইসরাফিলের শিঙার শব্দ কি শোনা যাচ্ছে? সুচেতনা!

©সৈকত দাস
২৭ শে অগ্রহায়ণ, ১৪২৬

Friday 6 December 2019

অষ্টম নরক

অষ্টম নরক

                            ~ সৈকত দাস


তবু আমার শান্তির আশ্রয়ে দুশ্চিন্তারা দেয় হানা
রাত্রির গভীর অন্ধকার থেকে পাপের পাখিরা
দিনের চোখ ঝলসানো সূর্যের আলোয়
নেমে আসে সারিবদ্ধ হয়ে—
পথচারীদের গা থেকে তুলে নেয় খাবলা খাবলা মাংস!
যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা তাদের দিকে
ফিরেও তাকাইনি আমি!
তাকাইনি, যখন তারা কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী—
আসমুদ্রহিমাচল ভারতের মাটিতে নখ দাঁত বের করে,
উন্মত্তের মতো উড়িয়েছে তাদের বিজয়পতাকা
লালকেল্লার উপরে; সংবিধানের মোটা বইয়ের ওপর
লিখে দিয়েছে অশ্লীল শব্দ!

সাংবাদিক খুন হয়েছেন, সত্যবাদী জেলে,
শত শত নারী হয়েছেন ধর্ষিতা,
পিশাচেরা তার অন্ত্র ছিঁড়ে বের করে এনেছে যোনিপথ দিয়ে,
অভিযোগকারিনীকে মারার চেষ্টায় লম্পট বিধায়কের লোকজন,
শিশু মরেছে পথের দুপাশে অন্নাভাবে…
তাদের মায়ের শুকনো বুকে খুঁজে পায়নি তারা প্রাণের আশ্বাস!
তখনও আমি আমার প্রাসাদের জানলা খুলিনি মধুবন্তী!

ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে গেল যখন দেশটা
যখন দেশের রাজা এয়ার পিউরিফায়ারের মধ্যে বসে
চালাতে লাগলেন সুশাসন,
জনগণের টাকাতে মুক্ত শিক্ষা না দিয়ে
রাজার মন্ত্রীরা উড়তে লাগলেন বিমানে
আর ওড়াতে লাগলেন কোটি কোটি কোটি কোটি…
তখনও আমি নিরপেক্ষ থেকে ভেবেছি— ভোর আসবেই!

মধুবন্তী!
আমার এই সুখের প্রাসাদে আজ তাদের পদচারণা,
হাড়হিমকরা গর্জন শুনতে পাচ্ছ কি?
শুনতে পাচ্ছ, নরমাংসভুক পিশাচদের কামার্ত চিৎকার?
ওরা ভেঙে ফেলতে চাইছে, দামী দামী গাছের কাঠের জানলা দরজা—
তোমার শরীরের লোভে আজ ওরা বাড়িতে হানা দিয়েছে…
কী করবে এখন? ভেবে দেখেছিলে কোনোদিন?
ভোর হতে কত দেরি মধুবন্তী?
অষ্টম নরক কি তৈরি হয়ে গেছে?

©সৈকত দাস
১৯ শে অগ্রহায়ণ, ১৪২৬
৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯

সর্বাধিক পছন্দের লেখা

পুরুষোত্তমের প্রতি

পুরুষোত্তমের প্রতি                                          ~ সৈকত দাস হে চির সুধীর, কৌশলী বীর, তব বাণী ছায়াতলে, অব...