Friday 19 June 2020

বিবৃতি

বিবৃতি
                          ~ শ্রী সৈকত



কবিতা লিখব? ধুর মশাই!
কাদের জন্য লিখব কবিতা? কেনই বা লিখব?
সবকিছু সোজাসুজি, মুখোমুখি বলে দিলেই তো হয়!
কী বললেন? শুনবে না কেউ?
তা, আমি যদি কাব্যে এসব লিখি,
ক’জন পড়বে কিনে, কজন বুঝবে আমার কথা?
সব বিক্রি তো ওই ঢলাঢলি প্রেমের বইয়েরই!
আর পড়লে তো আপনার মতো লোকেরা পড়বে:
উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকেদের সামনে
মঞ্চে উঠে কাঁপা কাঁপা গলায় আবৃত্তি করবেন আমার কবিতা।
যেন আধপেটা খাওয়া কৃষকের দুঃখে ব্যথিত হয়ে আপনি মূর্ছিতপ্রায়—
অথচ একটা ফুটো পয়সা সাহায্য করতে পারেননা আপনার প্রাচুর্য্য থেকে!
আপনাদের ছেলেমেয়ে যায় নামীদামী বেসরকারি স্কুলে…
না! প্রার্থনা করি, কোনো গরীবের ছেলে ভুল করেও ওই স্কুলে না যাক,
ওদের নীচু মানসিকতা যেন কোনো কৃষক শ্রমিক আর
নিম্ন মধ্যবিত্তের ছেলেকে স্পর্শ না করতে পারে!
কারণ, ওসব উচ্চবিত্তদের ঘরে প্রতিদিন যে খাবার নষ্ট হয়,
আমাদের এক-একদিন ওই পরিমাণ খাবারেই কেটে যায়!
তোমাদেরকে আমি ঘৃণা করি, কারণ আমি ঈশ্বরপুত্র নই,
হতে চাইও না: অত ক্ষমা করার গুণ আমার মধ্যে কোনোদিন না জন্মাক!
কখনো ব্রাহ্মণ সেজে, কখনো রাজা সেজে,
কখনো বা বিদেশী লুঠেরার রূপে শোষণ করেছ আমাদের;
তোমাদের ওই স্কুল, ওই কলেজে, ওই সমাজ—
প্রতিদিন আমাদেরকে দেখে করুণ হাসি হাসে,
চিরকাল আমাদেরকে নীচু নজরে দেখে এসেছে তারা,
এখনও দেখছে। তবে, ভবিষ্যতে দেখলে…
যাই হোক, আপনার জন্য আমি কবিতা লিখব না মশাই।
আমার লেখা, যদি আগুন জ্বালায় আপনার মনে,
পারবেন সেটাকে জ্বালিয়ে রাখতে?
পারবেন গরীবকে আরো গরীব না-হতে-দেওয়ার শপথ নিতে?
পারবেন ধনীর টাকার পাহাড়ে ধস নামাতে,
আর নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে স্বচ্ছল করতে?
পারবেন সরকারকে বাধ্য করতে ‘মানুষ’ হবার জন্য?
প্রশ্ন করতে পারবেন ওদেরকে: নিজেরা মানুষ না হয়ে,
কীভাবে মানুষের খোঁজ করছে ওরা? পারবেন কোনোদিন?

© শ্রী সৈকত
৪ আষাঢ়, ১৪২৭
বহরমপুর

No comments:

Post a Comment

সর্বাধিক পছন্দের লেখা

পুরুষোত্তমের প্রতি

পুরুষোত্তমের প্রতি                                          ~ সৈকত দাস হে চির সুধীর, কৌশলী বীর, তব বাণী ছায়াতলে, অব...