Tuesday 28 July 2020

মুদ্রা

মুদ্রা



আমার শহরে ভালোবাসার মুদ্রা অচল,
ইট কাঠ পাথরের শহরের বাসিন্দা আমি,
নারী-পুরুষ হাতে-হাত নিরর্থক লাগে
কঠিন বাস্তবতার ধুলো জমে আছে দুই চোখে।
কে যেন আমাকে আমায় দুহাত ছড়িয়ে ডাকে
পাথরে গড়া বুক তার, উষ্ণ লাভা বয় ধমনীতে,
চোখের জায়গায় গভীর দুটো গর্ত—
কেউ যেন কেড়ে নিয়েছে তার দেখার অধিকার!
তার দুই হাতের নানা জায়গা কেটে গিয়ে ঘা হয়ে আছে,
নোংরা পোকা আর মাছি ভনভন করছে সেখানে,
তার বিবস্ত্র দেহটাকে ভোগ করে চলেছে কিছু নারীপুরুষ
আর পাথর-বুক থেকে জীবন খোঁজার 
অকারণ চেষ্টা করে চলেছে একটা মাস ছয়েকের শিশু।
নির্বিকার নিস্পৃহ সে হয়তো ভেবে চলেছে কিছু…

কী ভাবছে?
কাল উন্নত শহরের নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়ে 
মারা গেছে তার চারটে ছেলে?
নাকি ভাবছে তার শ’খানেক সন্তানের কথা
যারা কালকেই মারা গেছে বিনা চিকিৎসায়?
নাকি কালকের ষাটজন ধর্ষিতা মেয়ের কথা?
নাকি সেই পরিবারের কথা, যাকে গ্রামের লোকজন
গ্রামছাড়া করেছে, কারণ তার মেয়ে ভিন্ন সম্প্রদায়ে বিয়ে করেছে?
সে কি মন্দির মসজিদের কথা ভাবছে
আমাদের খবরের চ্যানেলগুলোর মতো?
ভাবার কী আছে এত? 
এ তো রোজ হয়, হচ্ছে আর…

হঠাৎ মুখ খোলে সে, ভয় পেয়ে যায় ধর্ষক নারীপুরুষগুলো,
শিশু যেন পরম আশ্বাসে আঁকড়ে ধরে তার পাথরের বুক,
ধীরে ধীরে তার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়,
সকল নির্লজ্জতা, সকল খুনোখুনির প্রতিশোধ নেবার জন্য
যেন তৈরি হয়ে গেছে সে, বাইরে থেকে, ভেতর থেকে!

আগেই বলেছিলাম, আমার চোখে এ দেশ ক্রমশঃ পাথরের হয়ে যাচ্ছে।
হয়তো সে সম্পূর্ণ পাথর হয়ে গেছে এতক্ষণে!
ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম তার কাছে— স্পর্শ করলাম,
অবাক হলাম, সে ফুলের থেকেও বেশি কোমল!
জিজ্ঞাসা করলাম, “তবে কি এখনও মুক্তির সময় হয়নি মা?”
সে বলল, “এসেছে সেই সময়, দেখ, জেগেছে সন্তানরা আমার!”
“কিন্তু তুমি যে অনেক নরম হয়ে গেছ!”, সরে গেলাম আমি!
“একাজের জন্য তো পাথর হতে হবে, মা!”
সে বলল, “পাথর হলে ভালো বাসতে পারবি তোর মায়ের সন্তানদেরকে?”

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল!
রাত এখন অনেক গভীর,
তবে রাতের একটা পেঁচা কর্কশ শব্দে জানান দিয়ে গেল,
সব দেখছে সে, সব দেখছে তার গোল গোল চোখ দুটো দিয়ে;
আর আমার শহরে নতুন এক মুদ্রা চালু হয়েছে—
ভালোবাসার মুদ্রা!

© শ্রী সৈকত
১২ শ্রাবণ, ১৪২৭

2 comments:

  1. ভালো হয়েছে, প্রথমে নাম টা দেখে একটু রাগ হয়েছিল, আবার এই রেতের বেলা একটা গম্ভীর কবিতা পাঠালে, একটুও প্রেম থাকবেনা, শুধু কর্কশ বাণী, বিকৃত বুদ্ধিজীবীর না পাওয়ার , ব্যর্থতার বাণী আর সব গেলো সব গেলো করে তেড়ে ওঠার কথা লেখা থাকবে তাই ভেবেছিলাম, তবে পরে ভালো লাগলো, ভালোবাসা হলো মহাকর্ষের মতো, তাই জীবনের সকল কালে, সকল স্তরে ভালোবাসার প্রয়োজন ই সবচেয়ে বেশি বলে আমার মনে হয় ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রেম তো থাকতেই হবে। ওটা হলো গিয়ে মরুভূমির বুকে অনেক কষ্টে খুঁজে পাওয়া এক টুকরো মরুদ্যান। 😁
      আপনি উত্তমাশা অন্তরীপ? নাকি ঝড়ের অন্তরীপ?

      Delete

সর্বাধিক পছন্দের লেখা

পুরুষোত্তমের প্রতি

পুরুষোত্তমের প্রতি                                          ~ সৈকত দাস হে চির সুধীর, কৌশলী বীর, তব বাণী ছায়াতলে, অব...