Sunday 31 May 2020

সামান্য ঘটনা

সামান্য ঘটনা
            ~ শ্রী সৈকত



আমরা প্রতিদিনই না খেয়ে মরি
তোমাদের পোষা মিডিয়া, সেটা দেখতে পায় না।
আমরা সংখ্যায় যত হাজারই হই না কেন
তোমাদের কাছে ঘটনাগুলো ‘বিক্ষিপ্ত’ আর ‘ছোট’।
অবাক হইনি কিন্তু আমরা, অবাক হতে ভুলেছি কবেই—
আমাদের রক্ত চুষেই তো উপরে উঠবে তোমরা,
তারপর ছিবড়ে করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে সময়ের গিরিখাতে—
এসব আমরা জানি। আমাদের কাছে, এসব অনেক পুরনো বাণী।

© শ্রী সৈকত
১৭ ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭
বহরমপুর

অসামান্য

অসামান্য
                   ~ শ্রী সৈকত




স্বাধীনতার পর থেকে আমরা এতদিন মরেছি ফুটপাথের দুপাশে,
দেখতে পায় নি তোমাদের কঠোর-পরিশ্রম-করা সৎ মিডিয়া।
এবারে না হয় ট্রেনের বাথরুমেই পড়ে থাক আমাদের মৃতদেহ,
এবার না হয় সরকারী ‘সুবিধাপ্রাপ্ত’ ট্রেনেই
না-খেতে-পেয়ে মরুক আমাদের বাচ্চা।
ক্ষতি কিছু নেই, আমরা তো সামান্য মানুষ!
আমাদের সব ঘটনা ‘ছোট্ট’ই হয়।
আমরা রাষ্ট্রযন্ত্র বানাই কেন জানেন তো সুশীল ভদ্র মানুষেরা?
সেই যন্ত্রের চাকায় নিজেদেরকে ছিন্নভিন্ন করার জন্য।

© শ্রী সৈকত
১৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭
বহরমপুর

Friday 29 May 2020

মোহভঙ্গ

মোহভঙ্গ
              ~ শ্রী সৈকত



ছোটবেলায় পড়েছিলাম, পৃথিবী নামে একটাই গ্রহ আছে,
সেই গ্রহে মানুষ থাকে— মানুষ! প্রকৃতির শ্রেষ্ঠতম জীব!
এসব মিথ্যা পড়াশোনা গিলে অনেকটা বড়ো হয়ে গেলাম।

তারপর জানলাম, আসলে পৃথিবী অনেকগুলো!
একটা পৃথিবীতে মানুষ নর্দমার জল পান করে,
একটা পৃথিবীতে একটা ঘরের মধ্যে সাতটা মানুষ থাকে ঘাড় গুঁজে।
অন্য একটা পৃথিবী দেখেছি টিভিতে আর মুঠোফোনের ছবিতে,
সেখানে বিশাল বিশাল অট্টালিকায় থাকে একটা কিম্বা দুটো মানুষ—
তাদের বাড়ির সামনে বিশাল বড়ো বাগানে ফুটে থাকে
বিদেশি সব ফুল, পোষা বুলডগের সাথে রোজ ঘুরতে যায় মালিক।
আরেকটা পৃথিবীর একুশ বছরেরা হন্যে হয়ে অপর পৃথিবীর কাছে ছুটে যায়
কাজের খোঁজে, যোগ্যতা অনুযায়ী— পায় হয় তো কদাচিৎ!
কখনো কখনো একাধিক পৃথিবীর ভেন-চিত্র মিশে যায় একটা অঞ্চলে,
কোনো এক বিশেষ সময়ে… সম্ভবত নির্বাচনের আগে;
তখন অসংখ্য পৃথিবী তাদের অধিবাসীদের নিয়ে
একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে—
আর আমি শুধু লিখে যাই তাদের গল্প।

একমাত্র মানুষই বোধহয় এতগুলো পৃথিবী বানাতে পেরেছে!

© শ্রী সৈকত
১৫ ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭
বহরমপুর

Thursday 28 May 2020

অবিকল্প

অবিকল্প
              ~ শ্রী সৈকত
(জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর আমেরিকানদের চরম প্রতিবাদী মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়ে)



শান্তির বাণী শুনে কোনো অত্যাচারীর মাথাকে নত হতে দেখিনি কখনো।
কলমের আঁচড়কেও মুছে যেতে দেখেছি কবির রক্তের ধারায়।
যে প্রতিবাদী, তার মশালকে বামহাতে তুলে নিতে জানে না,
যে বিদ্রোহী, তার শোষককে নিজের রক্তচক্ষুর দৃষ্টি উপহার দিতে পারে না,
তার জেতার সম্ভাবনা খুব কম, নগণ্য!
তলোয়ারের থেকে কলমের জোর বেশি হতেই পারে,
কিন্তু সবাই যদি তলোয়ার ছেড়ে কলম ধরতে চায়,
সবাই যদি বলে, “শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবনত করব অত্যাচারীকে”,
তখন কাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে সেই ঝলসে ওঠা কলমেরা?
সময়ের সঙ্গে যদি প্রবাদগুলোর অর্থবিকৃতি ঘটে,
তবে ধর্মের নামে, গায়ের রং দেখে, কিম্বা স্রেফ সন্দেহের বশে
প্রতিদিন অসংখ্য খুন হতেই থাকবে—
আর আমরা— হাঁ করে বসে, শুধু লিখেই যাব, পাতার পর পাতা…

© শ্রী সৈকত
১৮ ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭
বহরমপুর

সারস্বত

সারস্বত
                    ~ শ্রী সৈকত



পুরনো বইয়ের খাঁজে নাক রেখে তার গন্ধ শুঁকেছ কখনো?
পেয়েছ দোকানের নতুন বইয়ের খাঁজের গভীরে লুকিয়ে থাকা গন্ধটা?
প্রচণ্ড ঝড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া বই যখন বন্যার জলে রাস্তায় ভাসতে থাকে—
তার সেই শোকস্তব্ধ গন্ধটা কি শ্মশানেও পেয়েছ এর আগে?
মোবাইল ফোনের খোঁচাখুঁচিতে মাথা বিধ্বস্ত হয়ে গেলে,
একবারও মনে হয়নি যন্ত্রটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
ঘরের মধ্যে স্তূপীকৃত বইগুলোকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পরম আবেশে?
কখনো হয়নি মনে, জড় কাগজের ওপর নিষ্প্রাণ অক্ষরগুলো মিলে
তৈরি করে ফেলে একটা জীবন্ত সত্ত্বাকে?—
যে কখনো প্রেমিক, কখনো নীরস, কখনো মায়ের মতো,
আবার হয়তো নীরবে তোমার আত্মার সামনে আয়না দেখায় কখনো কখনো!
একবারের জন্যে হলেও, কোনো বইয়ের প্রেমে পড়েছ, কোনোদিন?…

© শ্রী সৈকত
১৪ ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭
বহরমপুর

Monday 25 May 2020

কবির প্রতি

কবির প্রতি
                           ~ শ্রী সৈকত




খুব ভোরে আজ ঘুম ভেঙেছে হঠাৎ,
গান গাইছে ‘ঘুম জাগানো পাখি’,
শুনতে পেলাম ললিত রাগে সেতার,
মেঘ কাটিয়ে আলোর আঁকিবুকি!

সূর্য ওঠে পূর্বদিকের কোলে—
তবুও সময় শোনায় ‘বিষের বাঁশি’!
‘সর্বহারা’, ‘বাঁধন হারা’ যাঁরা,
‘ভাঙার গানে’ ফুটবে তাদের হাসি?

‘সাম্যবাদী’ নামধারীরা এখন
অসাম্যেরই ‘গুল বাগিচার’ মালিক।
‘প্রলয় শিখা’ জ্বালাও না আজ, কবি!
‘অগ্নিবীণায়’ ‘নতুন চাঁদের’ ঝিলিক!

‘রাঙা জবা’ শ্যামার পায়ের কাছে
‘পুবের হাওয়ায়’ হারিয়ে গেছে সেও;
‘জিঞ্জীর’ আজ ভাঙতে যদি চাই
সঙ্গে আমার থাকবে নাকো কেউ!

তোমার ছিল অধীনতার জ্বালা
সেই জ্বালা তো আজও আমার আছে;
‘মৃত্যুক্ষুধা’ ঝাঁপিয়ে পড়ে রোজই
‘বুলবুল’ রা মরছে কাজের খোঁজে!

বলব কী আর! ‘বিদ্রোহী’ বীর তুমি!
‘জাতের নামে বজ্জাতি’— সব জানো,
বলতে বলতে কণ্ঠ ছিঁড়ে গেলে
‘শেষ সওগাত’ পাঠিয়ে দিও যেন!

তোমার মতো আমরা সবাই দেখি
ঈদগাহতে শিবের জটার চাঁদ :
প্রণাম নিও, সেলাম নিও তুমি
‘ঝড়’ উঠলে ফের দিও এরশাদ।

© সৈকত দাস
১১ ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭
বহরমপুর

Friday 22 May 2020

নিয়মভঙ্গ

নিয়মভঙ্গ
                 ~ শ্রী সৈকত



কুসংস্কারের পায়ের তলায় পিষ্ট হতে হতে
যখন মানুষ ভুলে যায় নিজের অস্তিত্ব,
যখন কোনো অশরীরী নিয়ম, আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে তাকে :
সময়ের গতিমুখ পাল্টাতে তখন আসেন কিছু অতিমানব,
প্রতিটি মানুষের মধ্যে ঈশ্বরকে দেখে, প্রতি মুহূর্তে কাঁদতে থাকেন তাঁরা—
স্তব্ধ হয় ব্রাহ্মণ্যবাদীদের আস্ফালন,
শীতল হয় জীবন্ত নারীর চিতা,
আর সেই আগুন থেকে ফিনিক্স পাখির মতো বেরিয়ে আসেন,
ভারতপথিক রাজা রামমোহন ।

© সৈকত দাস
৮ ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭
বহরমপুর

সর্বাধিক পছন্দের লেখা

পুরুষোত্তমের প্রতি

পুরুষোত্তমের প্রতি                                          ~ সৈকত দাস হে চির সুধীর, কৌশলী বীর, তব বাণী ছায়াতলে, অব...