Tuesday 30 June 2020

উপহার

উপহার

                   ~ শ্রী সৈকত



তোমার এবারকার জন্মদিনে একটা সেতার উপহার দেবো।
প্রতিদিন ভাটিয়ার আর ললিতের আলাপে
ভোরের গভীর গম্ভীর গগনের ঘুম ভাঙ্গবে, তোমার হাত ধরে।
সকালের চা-জলখাবারে মিশে থাকবে ভৈরব।
তুমি বাঁচবে সেতারে, আমরা বাঁচব সন্ধ্যার হামীর রাগে।
গভীর রাত্রে ঘুম যদি না হয়, যদি পাশে কোনো বন্ধু না থাকে,
দরবারী কানাড়া বাজিও তারাদের কানে কানে,
সোহিনীর স্পর্শে ঘুম ভাঙুক দিননাথের।
তোমার এবারকার জন্মদিনে একটা বন্ধু উপহার দেবো,
একটা সরস্বতী দেবো এইবার।
বাজাতে বাজাতে তুরীয় অবস্থায় ঝালার উচ্ছ্বাসে হঠাৎ তার ছিঁড়ে গেলে,
অসীম নীলে উড়ন্ত পাখির বুকে সায়ক বিঁধলে—
বেঁধে নিও সেই তার, তুলে নিও সেই তীর:
তোমার জন্মদিনে বাজাও মালকোশ, 
উড়ে যাক সেই পাখি মুক্ত দিগন্তরেখার অভিসারে।
জন্মদিনে এবার একটা নতুন জন্ম উপহার পাবে তুমি,
আর তার সাথে এক আকাশ ভালোবাসা।

© শ্রী সৈকত
১৫ আষাঢ়, ১৪২৭

ন্যায়

ন্যায়
       ~ শ্রী সৈকত


সারারাত ধরে শুধু কেঁদেছিল ওরা
হয়তো একটু জলও পায়নি চেয়ে।
ওরা হয়তো চোখের জল পান করতে পারতো!
অপরাধ ছিল গুরুতর:
নির্দিষ্ট সময়ের বেশি সময় ধরে দোকান খুলে রেখেছিল।
তবে, ওরা হয়তো বড়লোক হলে বেঁচে যেত।
অকথ্য অত্যাচারের খবর পৌঁছে গেছিল বহুদূরে—
উর্দিধারী গুন্ডাদের হাতের লাঠি ঢুকে যাচ্ছিল
তাদের শরীরের ভেতরে…
ওদের সহ্য ক্ষমতার একটা সীমা ছিল হয়তো।
ডাক্তার এসেছিল কিন্তু সেও,
আইনের গুন্ডার ভয়ে মিথ্যা রিপোর্ট লিখেছিল।
ওদের দেহের রক্তে বারবার ভিজে যাচ্ছিল
ওদের পোশাক আর ন্যায়ের মন্দিরের পবিত্র মাটি!
ওরা নালিশ করতে পারেনি,
‘ন্যায়ের’ বিরুদ্ধে নালিশ করা যায় কখনো?
ওরা বাড়ি ফিরতে পারেনি,
পশুর আস্তানা থেকে কেউ কি বাড়ি ফিরতে পেরেছে কোনোদিন?
যাওয়ার সময় ওদের চোখের কোণে কি অভিমান লেগে ছিল—
নাকি অভিশাপ?!

© শ্রী সৈকত
১৫ ই আষাঢ়, ১৪২৭

Sunday 28 June 2020

ইতিহাস

ইতিহাস
                ~ শ্রী সৈকত



ইতিহাস, গল্প লেখে।
সময়ের গল্প, কর্মের গল্প।
আর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে দেয়
তার ধুলোমাখা দাবার ঘুঁটিগুলোকে।
ইতিহাসকে আমরা আবিষ্কার করি।
তাই আমাদের লেখা ইতিহাস হয় পক্ষপাতদুষ্ট!
একই ইতিহাস, ভিন্ন ভিন্নভাবে ধরা দেয় বিভিন্ন মানুষের চোখে—
তাই কখনো কখনো তা হয়ে ওঠে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক,
রাজনৈতিক কিম্বা ভৌগোলিক হিসেবে একপেশে।

ইতিহাস, গল্প লেখে।
তা বলে সে শুধু সাফল্যের গল্প বলেই থেমে যায় না:
প্রতি পাতায় সে লিখে যায় ব্যর্থতার গল্প,
কখনো সরাসরি, কখনো বা সূক্ষ্মভাবে।
তবে ইতিহাস সমদর্শী নয়।
সে শুধু সম্রাটদের গল্প লিখে যায়,
মনে রাখে না সমাজের আসল কারিগরদের যন্ত্রণাকে।

ইতিহাস ডাকাতদের গল্প লেখে।
সে চোখে আঙুল দিয়ে বারবার দেখিয়ে দেয়,
ধনের লালসাই শেষ করে দেয় সবকিছুকে,
সবশেষে ওই ডাকাতদেরও চলে যেতে হয় খালিহাতে।

অথচ আমরা শিখি না।
অথচ আমরা ইতিহাসকে ‘গল্পকথা’ বলে পড়াই ছোটদের,
‘অদরকারি বিষয়ে’র তালিকার সবার প্রথমে
জ্ঞানী অভিভাবকেরা লিখে দেন তার নাম!
তারপর?
তারপর আবার আমরা পুরোনো ভুলকেই নিয়ে আসি বর্তমানে।

তাই ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হয়…

© শ্রী সৈকত
১৩ আষাঢ়, ১৪২৭
বহরমপুর

Friday 19 June 2020

বিবৃতি

বিবৃতি
                          ~ শ্রী সৈকত



কবিতা লিখব? ধুর মশাই!
কাদের জন্য লিখব কবিতা? কেনই বা লিখব?
সবকিছু সোজাসুজি, মুখোমুখি বলে দিলেই তো হয়!
কী বললেন? শুনবে না কেউ?
তা, আমি যদি কাব্যে এসব লিখি,
ক’জন পড়বে কিনে, কজন বুঝবে আমার কথা?
সব বিক্রি তো ওই ঢলাঢলি প্রেমের বইয়েরই!
আর পড়লে তো আপনার মতো লোকেরা পড়বে:
উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকেদের সামনে
মঞ্চে উঠে কাঁপা কাঁপা গলায় আবৃত্তি করবেন আমার কবিতা।
যেন আধপেটা খাওয়া কৃষকের দুঃখে ব্যথিত হয়ে আপনি মূর্ছিতপ্রায়—
অথচ একটা ফুটো পয়সা সাহায্য করতে পারেননা আপনার প্রাচুর্য্য থেকে!
আপনাদের ছেলেমেয়ে যায় নামীদামী বেসরকারি স্কুলে…
না! প্রার্থনা করি, কোনো গরীবের ছেলে ভুল করেও ওই স্কুলে না যাক,
ওদের নীচু মানসিকতা যেন কোনো কৃষক শ্রমিক আর
নিম্ন মধ্যবিত্তের ছেলেকে স্পর্শ না করতে পারে!
কারণ, ওসব উচ্চবিত্তদের ঘরে প্রতিদিন যে খাবার নষ্ট হয়,
আমাদের এক-একদিন ওই পরিমাণ খাবারেই কেটে যায়!
তোমাদেরকে আমি ঘৃণা করি, কারণ আমি ঈশ্বরপুত্র নই,
হতে চাইও না: অত ক্ষমা করার গুণ আমার মধ্যে কোনোদিন না জন্মাক!
কখনো ব্রাহ্মণ সেজে, কখনো রাজা সেজে,
কখনো বা বিদেশী লুঠেরার রূপে শোষণ করেছ আমাদের;
তোমাদের ওই স্কুল, ওই কলেজে, ওই সমাজ—
প্রতিদিন আমাদেরকে দেখে করুণ হাসি হাসে,
চিরকাল আমাদেরকে নীচু নজরে দেখে এসেছে তারা,
এখনও দেখছে। তবে, ভবিষ্যতে দেখলে…
যাই হোক, আপনার জন্য আমি কবিতা লিখব না মশাই।
আমার লেখা, যদি আগুন জ্বালায় আপনার মনে,
পারবেন সেটাকে জ্বালিয়ে রাখতে?
পারবেন গরীবকে আরো গরীব না-হতে-দেওয়ার শপথ নিতে?
পারবেন ধনীর টাকার পাহাড়ে ধস নামাতে,
আর নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে স্বচ্ছল করতে?
পারবেন সরকারকে বাধ্য করতে ‘মানুষ’ হবার জন্য?
প্রশ্ন করতে পারবেন ওদেরকে: নিজেরা মানুষ না হয়ে,
কীভাবে মানুষের খোঁজ করছে ওরা? পারবেন কোনোদিন?

© শ্রী সৈকত
৪ আষাঢ়, ১৪২৭
বহরমপুর

Monday 15 June 2020

ডিপ্রেশন

ডিপ্রেশন
              ~ শ্রী সৈকত
(সুশান্ত সিং রাজপুত স্মরণে)




ডিপ্রেশনের বাংলা শুধু মনখারাপ না;
অনেক গভীর, অনেক অন্ধকার কথা ওটা।
মানুষের ভেতরটাকে নিংড়ে ছিবড়ে করে দেয় সে:
মানুষ ঝুলতে থাকে মাটির দু ফুট উঁচুতে।

ডিপ্রেশনের বাংলা আবার নিম্নচাপও না—
নিম্নচাপকে আবহাওয়াদপ্তর চিনে ফেলে ঠিক!
ডিপ্রেশনের বাংলা তরজমা না হয় নাই বা করলে:
বরং সেটাকে বোঝার চেষ্টা করতে পারো,
মানুষটার একাকীত্ব দূর করার সময়েই।

এমনকি ডিপ্রেশনের রোগীর সামনে কখনও বলো না যে,
সে ডিপ্রেশড— এটা তাকে আরো আরো শেষের দিকে ঠেলে দেয়!
বন্ধু হও তার, সাহচর্য দাও তাকে
আর চিকিৎসা শেষে সেরে ওঠার পর একসাথে 
এগিয়ে চলো সামনের দিকে।

© শ্রী সৈকত
৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭
বহরমপুর

Saturday 13 June 2020

খুন

খুন

                             ~ শ্রী সৈকত



কোথায় তোমার কাশ্মীরপ্রেম?
এখন আমরা চুপ কেন?
ওয়াহাবিরা মারছে মানুষ!
এখন খাচ্ছি স্যুপ কেন?
কাশ্মীরেতে পণ্ডিত খুন!
এখন কেন ঘরকুনো?
কোথায় তোমার ধিক্কার
আর কোথায় মুষ্ঠিবদ্ধ হাত?
ধর্মবিহীন তোমরা? নাকি—
তোমার ওটা বিশেষ জাত?
স্পেশাল কোনো স্ট্যাম্প নেই
আর নেইকো কোনো দলের ভড়ং
অন্যায়কে চাবকে সোজা
করতে পারে আমার কলম।
তোমাদের এই কান্না মেকি
(আর) শয়তানী ওই চিৎকারে,
যায় না চেপে মানুষ মরার
রক্ত-মাংস ছিটকালে।
এ ভাই! ধর্ম তোরাও দেখিস
ওরাও দেখে, তফাৎ কী?
শেষকালে তো মরবো আমরা
তোরা খাবি মাংস ঘি।
তোদের ওপর ঘেন্না ধরে
বলিস শুধুই আব্বুলিশ,
ধর্মহীনের বেশে তোরাই
ধর্ম দেখে চুপ থাকিস
ধর্ম দেখে চুপ থাকিস।

© শ্রী সৈকত
৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭

অন্যায্য

অন্যায্য

                           ~ শ্রী সৈকত



বাংলার টুইটারে আজ একটা হ্যাজ খুব ট্রেন্ডিং হয়েছে।
আমরা পরীক্ষা দেবো না।
কেন দেবো বলতে পারেন?…

এই সময়ে লক্ষ মানুষ হসপিটালে চিকিৎসাধীন
এর মধ্যেও পরীক্ষা নেন, কে আপনারা? উত্তর দিন!
ভারতে আজ ভাইরাল রোগ, মরছে মানুষ চারদিকেতে,
আক্রান্ত হবার পরে দেবেন আমাদেরকে খেতে?
বাঁচবোই না! থাকব কোথাও, পচা লাশের পাহাড়-মাঝে
ঠুকরে খাবে বন্য শকুন, মরবে আমার বাপ আর মা যে!
তাতে বলুন আপনার কী! আপনি সুশীল ভদ্রমানুষ,
মরলে দেবেন কয়েক টাকা, উড়বে তখন কথার ফানুস।
বুঝলেন বস্! আপনি বলেন, আমাদের খুব ইমিউনিটি,
যদিও হই সংক্রমিত, সেরে উঠব, নাইকো ক্ষতি—
জানেন কি স্যর দেশে আমার ক’টা পিপিই, ক’টা টেস্ট কিট,
জানেন ক’টা কোয়ারেন্টিন, কজন ডাক্তার একদম ফিট?
জানেন, আপনার যুবক ছেলে কিম্বা মেয়ে পরীক্ষাতে
আসবে চড়ে নিজের কার-এ… আমরা যাব বাস-ট্রেনেতে।
বলছেন কি? আপনি নাকি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করেন!
ডাক্তাররা মরছে কেন, কী স্যর, সেটা বলতে পারেন?
আমরা যদি আক্রান্ত হই, মরবে সাথে সব পরিবার,
তরুণ তাজা ভারত তখন শ্বাপদকূলের টাটকা খাবার,
ভবিষ্যতের ভারত তখন শকুনকূলের টাটকা খাবার!
ভাবুন মশাই, জোরসে ভাবুন, সময় এখন সঠিক ভাবার!

© শ্রী সৈকত
৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭

Friday 12 June 2020

গতিপথ

গতিপথ

                         ~ শ্রী সৈকত



জীবন মস্ত বড়ো একজন খেলোয়াড়।
সে চায় তোমাকে ঘষেমেজে শ্রেষ্ঠ করে তুলতে—
তোমার নিজের থেকে আরো আরো বেশি উন্নত!
দুটো বিকল্প পথ দেয় সে: হয় এগিয়ে চলো,
নয়তো এখনই মৃতুলোকে ঢোকার দরজা খুলে যাবে।

জীবন কখনো কখনো একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটায়।
সে দেখতে চায়, তুমি ঠিক কী করো:
তুমি কি আগের ভুলই আবার করবে—
নাকি, জীবন থেকে কিছু শিক্ষা নিতে পেরেছ তুমি,
দেখতে চায় সে!

সভ্য হওয়ার পরেও, পাকা বাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে
ঠাণ্ডা কফির কাপে চুমুক লাগিয়েও,
তুমি স্তব্ধ করতে পারো না সেই খেলোয়াড়কে—
সে খেলবেই: ঠিক যেমন খেলতো প্রাগৈতিহাসিক যুগে
গুহাবাসী মানুষদের সঙ্গে…

© শ্রী সৈকত
২৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭

ইমন আর কেদার

ইমন আর কেদার

                 ~ শ্রী সৈকত






নৈঋতে আজ সন্ধ্যাবেলায় মেঘ করেছে কালচে লাল,
ঠিক যেন এক শ্যামলা মেয়ের সিঁদুর মাখা চুলের জাল।
বড়ো বড়ো বাড়ির মাঝে গাছ দাঁড়িয়ে এক দুটি:
বাতাস দিলে তখন ওরা করছে যেন খুনসুটি—
পাশের ঘরে চলছে টিভি, বলছে খবর সঞ্চালক,
মিথ্যেমাখা মশলা দিয়ে টানছে ওরা অনেক লোক;
আজকে ক’টা খুন হয়েছে, কে করেছে শোকপ্রকাশ,
এ-দল ও-দল চাপানউতোর, উগড়োয় বিষ খবর-খাস—
আবার দেখো! মনটা কেমন বেআক্কেলে খারাপ লোক,
যতই থাকুক বিশাল আকাশ, নোংরা দিকেই কেবল ঝোঁক!
খারাপ আছে চারদিকেতে, সবই খারাপ নয় তো তাও:
খারাপটাকে নষ্ট করে দুঃখী লোকের দুখ মেটাও—
তাই বলে কি সুন্দরকে অবহেলা করতে হয়?
পাঁকের মাঝে দেখতে পাবে পদ্মপাতার জল শুকোয়।
এসব কথা ভাবতে বসে সময় গেছে অনেকটা
দখিন হাওয়া জানিয়ে গেল: দেখতে হবে আকাশটা।
কৃষ্ণ ব্যোমে, কাজল মেঘে, মিলেমিশে সব কালো,
তারার দেখা পাচ্ছি না তাও, ওই মেঘেতেই কোন আলো!
বাতাস বেয়েই উড়ল সে মেঘ, ঈশান দিকে মুখ করে—
তারায় ভরা একটা আকাশ ফিরল কখন চুপ করে:
অনন্তকে দেখব বলে রোজ সন্ধ্যায় ছাদের ’পর
থাকছি বসে, তুমিও চলো, গল্প হবে রাত্রিভর।

© শ্রী সৈকত
২৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৭

Thursday 4 June 2020

বিষবাষ্প

বিষবাষ্প

             ~ শ্রী সৈকত




সে জিজ্ঞেস করেছিল আমায়:
দাদা, তুমি হিন্দু, নাকি মুসলমান?
আমি অবাক হয়ে বললাম:
সেগুলো কী জিনিস রে? কোনো খাবার জিনিস?
সে বলল: আরে বাবা, তুমি কোন জাতের?
কিছুই বোঝো না নাকি?!
আমি যেন কিছু নতুন শব্দ শুনলাম!
বললাম: জাত আবার কী জিনিস? কেমন দেখতে হয়?

সে যেন কিছুতেই আমাকে বোঝাতে পারছিল না তার প্রশ্নটা।
জিজ্ঞেস করল ফের: আল্লাহকে মানো, না ঈশ্বরকে?
বললাম: ওরা কারা? কেন মানতে যাব ওদের?
অবশেষে সে হাল ছেড়ে দিল—
কেন হাল ছেড়ে দিল এত তাড়াতাড়ি?
কেন আরো বেশি সময় হাতে নিয়ে
বোঝাতে এলো না এই মূর্খটাকে, তার সর্বশক্তি দিয়ে?
সে হাল ছেড়ে দিল, কারণ তার বয়স মাত্র দশ।

ভাবছেন, আমি এসব জাতপাতের ব্যাপারে সব জানি;
অথচ, ওইটুকু মেয়ের সাথে নাটক কেন করলাম?
কেন আমি জাতের নাম শুনে আকাশ থেকে পড়লাম?
কেন আমি বললাম না, আমি হিন্দু?
কেন আমি বললাম না, আমি একদম মুসলমান নই—
নই খ্রীশ্চান, কিম্বা মধ্যমপন্থী বৌদ্ধ?

বলিনি, কারণ তার বয়স মাত্র দশ!
মাত্র দশ!!!

© শ্রী সৈকত
২২ শে মাঘ, ১৪২৬

Wednesday 3 June 2020

নব্য বর্ণপরিচয়

নব্য বর্ণপরিচয়

                          ~ শ্রী সৈকত


অ এ অপমান, আ এ আম খাই,
পেটে পড়েনিকো কিছু নাস্তায়।
ই এ ইচ্ছে, ঈ এ ঈশ্বর,
বলো দূর ছাই, সব নশ্বর!

উ এ উৎপাত, ঊ এ ঊর্বর,
এর ঘুম নেই, ওর নাই ঘর।
ঋ এ ঋগ্বেদ মহা গ্রন্থ,
করো চুপ আজ, শোনো মন্ত্র।

এ তে একদিন, ঐ ঐচ্ছিক,
রাজা বলছে, সব হ্যায় ঠিক।
ও তে ওলা গাড়ি, ঔ এ ঔরস,
দেখ ঢোঁড়া সাপ, করে ফোঁসফোঁস!

ক এ কম খাও, খ এ খাদ্য,
বাজে ওই দ্যাখ, ভোট-বাদ্য;
গ এ গোমাতা, ঘ এ ঘণ্টা,
গাছ কেটে ফেল, যাক প্রাণটা।
ঙ ভাঙে সব, ভাঙে মনটা!

চ এ চশমা, ছ এ ছারখার,
স্টেজে লেকচার মারা দরকার।
জ এ জাতপাত, ঝ এ ঝক্কি,
মেরে করে দেবো ডোডো পক্ষী।
ঞ ঝঞ্ঝা আনার শখ কি?

ট এ টক্কর, ঠ এ ঠুনকো,
দেখো আশপাশে কত খুন গো।
ড এ ডানদিক, ঢ এ ঢাকঢোল,
আরে বোস না! কেন শোরগোল?
ণ এ কামবাণে সব তালগোল!

ত এ তথাগত, থ এ থই নাই,
বলে কাজ চাই, বলে ভাত চাই!
দ এ দেখিনি তো ধ এ ধর্ষণ,
খাও হরলিক্স, আর গান শোন।
ন এ নাই লুকোবার কোনো কোণ!

প এ পচে গেছে, ফ এ ফুল-ফল,
শিশু নিষ্পাপ, হাসে খলখল।
ব এ বেকাররা ভ এ ভয় পায়,
দেশে প্রেম নাই, আর কাজ নাই।
ম এ মা’কে মেরেও লাজ নাই!

য এ যন্ত্র, র এ রাক্ষস,
আমি ভালো লোক, সব তোর দোষ।
ল এ লক্ষ্মী ব এ বাইরে
যেতে ভয় পায়, সেফ নয় রে!
শ এ শান্ত, ষ এ ষোড়শী,
কান দিসনা পাড়া-পড়শী—
স এ সবাই মেলা হাতে হাত,
হ এ হায়েনাগুলো যাক নিপাত;
ড় এ লড় করে আজ প্রাণপণ:
ঢ় এ আষাঢ়-মেঘের গর্জন।
য় তে আয় তোরা আয় একসাথ,
ৎ এ ভাঙি অসৎ -এর কালো হাত।

অনুস্বরের নেই দেখি আজ কোনো রং—
বিসর্গ ঝড় তোলে তোর নিঃশ্বাসে,
চন্দ্রবিন্দু পাঁক থেকে উঠে চুপি চুপি,
সবার সাথে বেরং দেশের পাশে বসে;
খুনে রাঙা ওই সূর্যটা এক নয়া ভোর নিয়ে আসে,
সব বর্ণেরা মিলে গিয়ে সাদা রঙের স্রোতেই ভাসে—
দাঁতে দাঁত চেপে রাত কে তাড়িয়ে নবযৌবন হাসে:
আর বর্ণমালার বিজয়ডঙ্কাধ্বনি কানে ভেসে আসে…

(শেষের স্তবকের ছন্দ, অন্য স্তবকগুলির মতো নয়)

© শ্রী সৈকত
৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০
২১শে মাঘ, ১৪২৬

লাল তথ্যের বই

লাল তথ্যের বই

                             ~ শ্রী সৈকত



অতীতের সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে কখনো কখনো ।
পাড়ে আছড়ে পড়ে উন্মত্ত ঢেউ এর ফেনা;
স্রোতে ভেসে আসে ভুলে যাওয়া যত কথা আর অন্ধকার স্মৃতি ।
আধখাওয়া একটা ডোডোপাখি হেঁটে বেরিয়ে আসছে সেখান থেকে,
তারপর একে একে চর্বি বার করা তিমি, চামড়া ছাড়ানো সাদা বাঘ,
প্লাস্টিক আবর্জনা খেয়ে মরা হাঙরটা উঠে আসে সেই সমুদ্র থেকে ।
উঠে আসে নাম না জানা আরো কত পশুপাখি,
উঠে আসে হাত পা কাটা অসংখ্য সবুজ গাছ— হেঁটে চলে তারা ।
রক্তাক্ত তাদের দেহ, তাদের সবার মুখে ব্যঙ্গের হাসি,
তারা ইশারা করছে তাদের সেই সারির পেছনের দিকে…
কে আসছে পেছনে ? দূরে অন্ধকারের মধ্যে অবয়বটা ফুটে ওঠে,
তবে মনে হয় ওটা আমারই মনের ভুল !
চোখটা মুছে নিই একবার, আবার, বারবার, কিন্তু না—
সেই মৃত্যুর সারির সবার শেষে, দাঁড়িয়ে আছি, আমি !
রেড ডেটা বুকের বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়,
কে যেন একটা লিখে দিচ্ছে— হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স !!

© শ্রী সৈকত
১৫ ই চৈত্র, ১৪২৬

সর্বাধিক পছন্দের লেখা

পুরুষোত্তমের প্রতি

পুরুষোত্তমের প্রতি                                          ~ সৈকত দাস হে চির সুধীর, কৌশলী বীর, তব বাণী ছায়াতলে, অব...